অপরাধ ও দূর্ঘটনারাজনীতিসারাবাংলা

বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, বেফাঁস মন্তব্য এবং পরিনতি

ক্ষমতা ছিলো অনেক, ছিলো যেকোন কাজ করার ক্ষমতা মূহুর্তের মধ্যে। ছিলো শুভাকাঙ্ক্ষী সমর্থন গোষ্ঠি। ক্ষমতার দাপট ছিলো চরমে। কখনও কখনও সাধারণ মানুষদের এতই সাধারণ মনে করতো যেনো গনিতের মাঝেও আসতো না।
অতিরিক্ত আত্ম অহংকার এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জের,বেফাঁস মন্তব্য এবং নানান কারনে সমালোচিত আলোচিত ব্যাক্তিরাও দকখেন মুদ্রার ওপিঠটি। সম্প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.মুরাদ হাসান এবং গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কর্মকাণ্ডের মাশুল দলও বহন করছে। এবং নাড়া দিয়েছে সমগ্র বাংলাদেশ সহ বহির্বিশ্বেও।
একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে পদ হারিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এখন সংসদ সদস্য ও দলীয় পদসহ সব ক্ষমতাই হারানোর পথে তিনি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে মুরাদ হাসানকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে। তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করার কথাও বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
শুধু মুরাদ হাসান একা নন, বিতর্কিত কথাবার্তায় সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম হারিয়েছেন মেয়র ও দলীয় পদ। একইভাবে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী মেয়র ও দলীয় পদ হারানোর পর এখন পুলিশের রিমান্ডে।
২০১৪ সালে আচমকা হজ, হজরত মুহাম্মদ (স) এবং তাবলিগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বিতর্কের ঝড় তোলেন তৎকালীন প্রতাপশালী রাজনীতিক ও মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এর জেরে মন্ত্রিত্বের চেয়ার থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। হারান সংসদ সদস্যের পদও। এমনকি দলীয় পদও হারান আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী সভাপতিম-লীর এ সদস্য। মামলা হয় দুর্নীতির। কারাবরণও করতে হয় তাকে। এখন নিভৃতচারী লতিফ সিদ্দিকী। এক রকম ঘরবন্দি জীবন কাটান। লতিফ সিদ্দিকীর কাঁধে এখন খেলাপি ঋণের বোঝা। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা একাধিক মামলার আসামিও তিনি। এক সময়ের দাপুটে এ মন্ত্রী মামলা-মোকদ্দমা লড়তে লড়তে কার্যত এখন রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছেন।
মুরাদ হাসান, জাহাঙ্গীর আলম, আব্বাস আলী এবং লতিফ সিদ্দিকী প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় ছিলেন দোর্দ- প্রতাপশালী ও ক্ষমতাধর। কিন্তু বিতর্ক তাদের সব ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এক সময় তাদের ইশারায় চলতেন বহু মানুষ। ক্ষমতা হারানোর পর কেউই তাদের পাশে নেই। নেতার সঙ্গে বিপাকে পড়েন তাদের কর্মী, সমর্থক ও অনুসারীরাও।
ক্ষমতা পদ-পদবি হারানোর প্রাক্কালে মুরাদ হাসান, জাহাঙ্গীর আলম ও আব্বাস আলী বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চান। কিন্তু একমাত্র লতিফ সিদ্দিকী তার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাননি। নিজের দেওয়া বক্তব্য অস্বীকারও করেননি। ডা. মুরাদ হাসান প্রথমে আলোচনায় আসেন রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে কথা বলে। তখন তার এ বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় বিভিন্ন মহলে। বিভিন্ন সময়ে আরও বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনায় বিদ্ধ হন তিনি। মাত্র কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে আবার আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান। তার ওই বক্তব্যে বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। নারীবাদী কয়েকটি সংগঠন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে।
এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে মুরাদ হাসানের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়। প্রকাশ অযোগ্য সেসব কথা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই রবিবার রাতে মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে কিছুদিন আগেও জাহাঙ্গীর আলমের ইশারায় চলত গাজীপুর জেলার অনেক কিছুৃ। সার্বক্ষণিক দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক-অনুসারীরা তার চারপাশ ঘিরে থাকত। কিন্তু মেয়র ও দলীয় পদ হারানোর পর এখন তার পাশে কেউ নেই। লতিফ সিদ্দিকীর মতো জাহাঙ্গীর আলমও নিজেকে আড়াল করে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। যে কোনো দিন তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পরই তার বক্তব্য নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে গাজীপুর থেকে। এ সময় তিনি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তার বক্তব্য ‘সুপার এডিট’ করে প্রচার করা হয়েছে। এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। পুরো ঘটনার জন্য ক্ষমাও চান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।
গত ২৫ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রথমে দলীয় পদ থেকে ছিটকে পড়েন কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। পরে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে নিজ এলাকায়ই বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ হয়। একপর্যায়ে তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় একাধিক মামলা। গত ১ ডিসেম্বর আব্বাস আলীকে ঢাকা থেকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন। বিতর্কিত মন্তব্যের পর ইতোমধ্যে সরকারি ড্রেন দখল করে আব্বাস আলীর গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন।
সচেতন সমাজ মনে করেন এসব বেসামাল মন্তব্য করার কারন ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে দলীয় এবং জেলা পদ থেকেও অপসারণের ফলে অন্যদের কাছে একটা বার্তা যাবে। এর ফলে অনেক নেতা নিজেদের সামাল দেওয়ার দিকে মনোযোগী হবেন। আর এমন লোকদের বহিষ্কার দলের জন্য একটা ভালো উদ্যোগ। আগে কিন্তু আমরা বহিষ্কারের বিষয় তেমন একটা দেখতাম না। আমরা অনেক সময় দেখি শুধু শাসক দল নয়, দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাও তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেন, যেগুলো শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।’

Related Articles

Back to top button