অপরাধ ও দূর্ঘটনাপ্রশাসনব্রেকিং

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

এম এ হানিফ রানা, স্টাফ রিপোর্টার

কথায় আছে বন্দুকের গুলি আর মুখের কথা একবার বেরিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই কিছু বলার আগে অন্তত কিছুটা চিন্তা ভাবনা করে বলতে হয়। না হলে তার খেসারতও দিতে হয় কখনও কখনও সমান তালে তাল মিলিয়ে। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে বিতর্কিত মন্তব্য এবং অডিও ফাঁস হয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে থাকা তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা এরই মধ্যে অবহিত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে নিজের সরকারি বাসভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ডা. মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকালের (মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর) মধ্যেই তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

গত শুক্রবার ৩ ডিসেম্বর এক লাইভ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলছিলেন। ওই সময়ই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করে বসেন তিনি। মুহূর্তেই তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে অশব্য, শিষ্টাচার বহির্ভূত, নারীবিদ্বেষী, কুরুচিপূর্ণ বলে অভিহিত করেন অনেকেই। সরকারের দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়— এমনটি বলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও। পর প্রতিমন্ত্রী নিজে অবশ্য এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান-দাবি সবকিছুকেই নাকচ করে দেন। ডা. মুরাদ বলেন, সমালোচকদের গালিগালাজ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
এরপরই রোববার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ডা. মুরাদ হাসানের একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহির সঙ্গে সেই কথোপকথনেও ডা. মুরাদকে অশালীন কথা বলতে শোনা যায়। মাহিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তার ভাড়া করা রুমে আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি না এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তাকে তুলে নেওয়া হবে। ওই সময় তাকে যৌন সহিংস কথাবার্তা বলতেও শোনা যায়।

জাইমাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য এবং ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় চরম বিতর্কের মুখে পড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ। নারী অধিকারকর্মীসহ রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রীর প্রতি। কোনো কোনো বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগও চাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহিত হওয়ার পর তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলেন।
বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা ডা. মুরাদের জন্য নতুন নয়। কিছুদিন আগে বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরার দাবি জানিয়ে নিজ দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না— এমন মন্তব্যও তিনি আরেক অনুষ্ঠানে করেন। আবার দেখা যায় তিনি এক মসজিদের মিম্বারে বসে ইমাম সাহেব সহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিচে বসিয়েও আলোচনার জন্ম দেন। আরেক ভিডিওতে দেখা যায় এক মঞ্চে উঠে নাচ গানের নিজেকে জরিয়ে রাখেন। সম্প্রতি তার এমন কর্মকান্ডে ব্যাপক সমালোচনা হতে থাকে দেশ ছেড়ে বাহিরেও।

ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এই রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Related Articles

Back to top button